মুদ্রাস্ফীতি: বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব আপনার উপর কিভাবে আসতে পারে দেখে নিন। Inflation in Bangla
মুদ্রাস্ফীতি
কি?
মুদ্রাস্ফীতি বলতে একটি দেশের মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতার পরিমাণ কমে যাওয়া বোঝায়। এটি সাধারণত দাম স্তরের সামঞ্জস্যহীন বৃদ্ধির কারণে ঘটে। কিছু মুদ্রাস্ফীতি স্বাভাবিক এবং অর্থনীতির জন্য উপকারী। কিন্তু যদি এটি অত্যন্ত উচ্চ হয়, তাহলে এটি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতির
কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- চাহিদা পুল মূলত বেতন বৃদ্ধি থেকে
- আমদানির মূল্য বৃদ্ধি
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ
- অর্থনৈতিক নীতি
- সরকারী খরচ
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত সুদের হার বাড়িয়ে দেয় এবং মৌদ্রিক নীতি কঠোর করে।
মুদ্রাস্ফীতির একটি সহজ উদাহরণ হিসেবে আপনি চিন্তা করতে পারেন চা-এর একটি কাপ ক্রয়ের দাম। যদি গত বছর একটি চা-এর কাপ ক্রয় করার জন্য আপনাকে 10 টাকা প্রয়োজন হতো, কিন্তু এই বছর একই চা-এর কাপ ক্রয় করতে 15 টাকা প্রয়োজন হচ্ছে, তাহলে মূল্যবৃদ্ধি 50%।
এটি মুদ্রাস্ফীতির একটি সহজ উদাহরণ
যেখানে একই পণ্যের মূল্য
সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতি
ও মুদ্রাস্ফীতি এর মধ্যে পার্থক্য
কি?
মূল্যস্ফীতি
হল সাধারণ মূল্য স্তরের
সামগ্রিক বৃদ্ধি। যেমন,
চাল, ডাল, মাংস, সবজি
ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির কারণে
মোট মূল্যস্তরের বৃদ্ধিকে মূল্যস্ফীতি বলে। এর
ফলে একই পরিমাণ টাকায়
আগের চেয়ে কম জিনিস
ক্রয় করা যায়।
অন্যদিকে,
মুদ্রাস্ফীতি হল মুদ্রার মূল্যহ্রাস। যেমন,
টাকার ক্রয়ক্ষমতার হ্রাস হলে তাকে
মুদ্রাস্ফীতি বলে। এর
ফলে মুদ্রার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও
একই পরিমাণ টাকায় আগের
চেয়েও কম ক্রয়শক্তি।
মুদ্রাস্ফীতির
কারণ কি?
মুদ্রাস্ফীতির
কিছু প্রধান কারণ ও
উদাহরণ নিম্নরূপ:
মুদ্রাস্ফীতির
কারণ:
- অতিরিক্ত মুদ্রা সৃষ্টি - যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপে তখন মুদ্রার পরিমাণ বেশি হয়ে যায় কিন্তু মূল্যবোধ যথাযথভাবে বৃদ্ধি পায় না।
- ঋণ খরচ - সরকারের বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় যখন বেশি পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয় তখনও মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়:
১৯৭০ সালে যুদ্ধাবস্থায় বাংলাদেশ
সরকার অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপে, ফলে
ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
জিম্বাবোয়ে
২০০৮ সালে অর্থনৈতিক অস্থিরতায়
মুদ্রাস্ফীতি ছিল ২৩১ মিলিয়ন
শতাংশ।
মুদ্রাস্ফীতির
হার নির্ণয় কিভাবে করে?
মুদ্রাস্ফীতির
হার নির্ণয়ের জন্য সাধারণত দুটি
ধরনের সূচক ব্যবহার করা
হয় - দামসূচক এবং মৌলিক মূল্যসূচক। দামসূচকের
মধ্যে রয়েছে সিপিআই (উপভোক্তা
দামসূচক) এবং ডব্লিউপিআই (সর্বমোট
দামসূচক)। এদের
পার্থক্য হল পণ্যনির্বাচনার ক্ষেত্রে।
উদাহরণস্বরূপ,
বাংলাদেশে ২০২২ সালের নভেম্বর
মাসে সিপিআই ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতির
হার ছিল ৬.২৭%।
মুদ্রাস্ফীতির
প্রভাব কি রকম হতে পারে?
মুদ্রাস্ফীতির
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব নিম্নরূপ:
মুদ্রাস্ফীতির
প্রভাব:
- মূল্যস্ফীতি: মুদ্রাস্ফীতিতে দামস্তর বৃদ্ধি ঘটে যাকে মূল্যস্ফীতি বলে।
- ঋণের বোঝা কমে: মুদ্রাস্ফীতির কারণে ঋণের রিয়েল মূল্য কমে যায়।
- আয়ের বৈষম্য বৃদ্ধি: মজুর ও ফিক্সড আয়জনদের রিয়েল আয় কমে যায়।
- অর্থনীতিতে অস্থিরতা: উৎপাদন ও বিনিয়োগ কমে যায়, যার ফলে অর্থনীতি অস্থির হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়:
জিম্বাবোয়ে
২০০৮ সালে মুদ্রাস্ফীতি ছিল
২৩১ মিলিয়ন শতাংশ। এর
ফলে দেশটির অর্থনীতি ধ্বংস
হয়ে পড়ে।
হাইপারইনফ্লেশন
অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মুদ্রাস্ফীতি আমার উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে?
মুদ্রাস্ফীতি
আপনার উপর প্রত্যক্ষ এবং
পরোক্ষভাবে বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে:
১. মূল্যস্ফীতির কারণে আপনার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। একই টাকায় আগের চেয়ে কম কিনতে পারবেন।
২. সাধারণত ঋণের সুদের হার বেড়ে যায় যা আপনার ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দেয়।
৩. স্থিতিশীল আয়ে থাকা মানুষের ক্ষেত্রে তাদের রিয়েল আয় কমে যায়।
৪. সঞ্চয় ও বিনিয়োগ কমে যেতে পারে যা আপনার ভবিষ্যৎ উপকৃত করতে পারে।
৫. পুঁজিবাজার ও অর্থনীতিতে অস্থিরতা
এসে আপনার কাজ-ব্যবসায়
প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে।
সুতরাং
মোটামুটি সকল ক্ষেত্রে প্রতিকূল
প্রভাব পড়তে পারে মুদ্রাস্ফীতির
কারণে।
মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশ এ বর্তমানে কেমন?
বাংলাদেশে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার সামান্য বৃদ্ধির পথে রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বলা যায়:
২০২৩ সালে মুদ্রাস্ফীতির হার 8.60%। এটি আগের বছরের তুলনায় ২.৩২% বেশি.। মূলত খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এই বৃদ্ধি ঘটেছে। তবে WHO-র মতে ৫-৬% হারের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি স্বাভাবিক। তাই বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য হলো এটি ৫% এর মধ্যে রাখা।
তাই বর্তমান অবস্থা সামান্য উদ্বেগজনক
হলেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেটিও বলা যায় না।
আপনার জানার সুবিধার্তে নিম্নে কিছু দেশের বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি কেমন তার একটি তালিকা দেওয়া হলঃ
আইএমএফ (IMF) এর ২০২৩ সালের তথ্য মতে বর্তমানের নিম্নোক্ত দেশগুলোর মুদ্রাস্ফীতির হার উল্লেখ করা হল।
মুদ্রাস্ফীতি
কিভাবে কমানো যায়?
মুদ্রাস্ফীতি কমানোর উপায়:
- নীতিগত সুদ বৃদ্ধি - কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সুদ বাড়িয়ে মুদ্রা সরবরাহ কমায়।
- রাশন নিয়ন্ত্রণ - রাশন কার্ড ব্যবস্থা জোরদার করে খাদ্যশস্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা।
- ট্যাক্স কমানো - কর ও শুল্ক হ্রাস করে উৎপাদন বাড়ানো।
- ঋণ সংকুচিতকরণ - সরকারি খরচ ও ঋণ সংকুচিত করা।
উদাহরণ:
২০০৮ সালে জিম্বাবোয়ে মুদ্রাস্ফীতি
কমানোর লক্ষ্যে টাকা ছাপা বন্ধ
করে দেয়।
ভারতে ২০১৪-১৬ সালে খাদ্যাভাব দূর করা হয় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে।
এভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য।